বাংলাদেশে ওয়াইফাই সেভেন: নতুন যুগের উচ্চগতির ইন্টারনেট
![]() |
ছবিঃ সংগৃহিত। |
সময়ের সঙ্গে ইন্টারনেটের ব্যবহার দ্রুত বাড়ছে। সাধারণ গ্রাহক থেকে শুরু করে বড় প্রতিষ্ঠান পর্যন্ত ইন্টারনেটের ওপর নির্ভরতা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণে নেটওয়ার্কিং খাতে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির প্রয়োজনীয়তা বাড়ছে।
মোবাইল ইন্টারনেট প্রযুক্তিতে থ্রিজি, ফোরজি, ফাইভজির নাম সবার পরিচিত হলেও অনেকেই জানেন না, ওয়াইফাই প্রযুক্তিতেও বিভিন্ন জেনারেশন রয়েছে। বর্তমানে ব্যবহৃত ওয়াইফাই প্রযুক্তি মূলত ‘ওয়াইফাই সিক্স’ বা ষষ্ঠ প্রজন্মের ওয়াইফাই। এর আরও উন্নত সংস্করণ হলো ‘ওয়াইফাই সেভেন’, যা ‘আইইইই ৮০২.১১বিই’ বা ‘এক্সট্রিমলি হাই থ্রুপুট (ইএইচটি)’ নামে পরিচিত। এই আধুনিক প্রযুক্তি এখন বাংলাদেশেও পৌঁছেছে।
ওয়াইফাই সেভেন কী?
উন্নত গতি এবং বিশেষ কিছু সুবিধার জন্য ওয়াইফাই সেভেন প্রযুক্তি ইতোমধ্যে বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ২০২৩ সালের শুরুতে ওয়াইফাই প্রযুক্তির মান নির্ধারণকারী বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠান ওয়াইফাই অ্যালায়েন্স আনুষ্ঠানিকভাবে ‘ওয়াইফাই সার্টিফায়েড সেভেন’ প্রোগ্রাম চালু করে। এর মাধ্যমে নির্দিষ্ট মান অনুযায়ী কয়েকটি ওয়াইফাই সেভেন ডিভাইসকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে বিশ্বের ৫৮টি দেশে এই প্রযুক্তির জন্য প্রয়োজনীয় স্পেকট্রাম (তরঙ্গ) উন্মুক্ত করা হয়েছে।
বিশ্বখ্যাত গবেষণা প্রতিষ্ঠান রিসার্চ অ্যান্ড মার্কেটস এর তথ্য অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে ওয়াইফাই সেভেন বাজারের মূল্য ২৪০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাবে। তাই ধারণা করা হচ্ছে, বাংলাদেশেও এই প্রযুক্তির ব্যবহার দ্রুত বৃদ্ধি পাবে।
ওয়াইফাই সেভেনের বিশেষ বৈশিষ্ট্য
ওয়াইফাই সেভেন প্রযুক্তি ওয়াইফাই সিক্সের ওপর ভিত্তি করে উন্নত কিছু ফিচার সংযোজন করেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:
৩২০ মেগাহার্টজ ব্যান্ডউইথ (উন্নত গতি ও ডেটা ট্রান্সমিশন)
৪০৯৬-কোয়াড্রেচিওর অ্যাম্প্লিচিউড মডুলেশন (কিউএএম) (উন্নত সংকেত প্রক্রিয়াকরণ)
মাল্টিপল রিসোর্স ইউনিট (বেশি কার্যকর ডেটা ব্যবহার)
মাল্টি-লিংক অপারেশন (এমএলও) (তরঙ্গ ব্যবহারের নমনীয়তা)
এই বৈশিষ্ট্যের কারণে ওয়াইফাই সেভেন ডেটা ট্রান্সমিশনের হার অনেক বেশি এবং ল্যাটেন্সি (ডেটা প্রেরণ ও গ্রহণের বিলম্ব) অনেক কম। এর ব্যান্ডউইথ ২৩ জিবিপিএস, যা ওয়াইফাই সিক্সের তুলনায় ২.৪ গুণ বেশি।
ওয়াইফাই সেভেনের কার্যকারিতা
ওয়াইফাই সেভেন প্রযুক্তির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো ২.৪ গিগাহার্টজ ও ৫ গিগাহার্টজের পাশাপাশি ৬ গিগাহার্টজ ফ্রিকোয়েন্সি ব্যান্ড সমর্থন করার ক্ষমতা। এটি কন্টিজিয়াস ৩২০ মেগাহার্টজ এবং নন-কন্টিজিয়াস ১৬০+৮০ মেগাহার্টজ ব্যান্ডউইথ মোড সমর্থন করে, যা কৃত্রিম বাস্তবতা (এআর) ও ভার্চুয়াল বাস্তবতা (ভিআর) প্রযুক্তির জন্য আদর্শ।
ওয়াইফাই সিক্সে ব্যবহারকারীরা নির্দিষ্ট রিসোর্স ইউনিটের মাধ্যমে ডেটা পাঠাতে ও গ্রহণ করতে পারেন, যা কার্যকারিতায় সীমাবদ্ধতা তৈরি করে। কিন্তু ওয়াইফাই সেভেন মাল্টিপল রিসোর্স ইউনিট ব্যবহার করে অধিক কার্যকর স্পেকট্রাম ব্যবহারের সুযোগ দেয়।
ওয়াইফাই সেভেন ব্যবহারের উপায়
ওয়াইফাই সেভেন ব্যবহারের জন্য সংশ্লিষ্ট প্রযুক্তিসম্পন্ন রাউটার বা অ্যাক্সেস পয়েন্ট (এপি) দরকার। বর্তমানে কিছু স্মার্টফোন ও অন্যান্য ডিভাইস ওয়াইফাই সেভেন সমর্থন করলেও অনেক ক্ষেত্রে পুরনো রাউটার থাকার কারণে ব্যবহারকারীরা এর সুবিধা পুরোপুরি পাচ্ছেন না।
সুতরাং, উন্নত ওয়াইফাই সেভেন পরিষেবা পাওয়ার জন্য উন্নতমানের রাউটার বা অ্যাক্সেস পয়েন্ট কেনা গুরুত্বপূর্ণ। তা না হলে প্রকৃত সুবিধা পাওয়া সম্ভব হবে না।
বিশ্বব্যাপী উচ্চগতির ইন্টারনেট ব্যবহারের চাহিদা বেড়ে যাওয়ার কারণে ওয়াইফাই সেভেন দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এটি শুধুমাত্র ইন্টারনেটের গতি বাড়াবে না, বরং নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে খাপ খাইয়ে উচ্চমানের পরিষেবা নিশ্চিত করবে। বাংলাদেশেও এই প্রযুক্তির প্রসার ভবিষ্যতে ডিজিটাল অবকাঠামোকে আরও শক্তিশালী করবে।