সিপিআর: জীবন রক্ষার জরুরি চিকিৎসা পদ্ধতি
![]() |
ছবিঃ সংগৃহিত। |
চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় কার্ডিওপালমোনারি রিসাসিটেশন বা সংক্ষেপে 'সিপিআর' হলো একটি জরুরি প্রাথমিক চিকিৎসা পদ্ধতি, যা কারো হৃদযন্ত্র হঠাৎ বন্ধ হয়ে গেলে বা শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে গেলে প্রয়োগ করা হয়। এটি একজন ব্যক্তির ফুসফুসে অক্সিজেন সরবরাহ এবং শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গসমূহে রক্ত চলাচল বজায় রাখতে সহায়তা করে।
সিপিআরের প্রয়োজনীয়তা: যখন কেউ হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে পড়ে, স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে পারে না, অথবা তার হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়, তখন দ্রুত সিপিআর প্রয়োগ করা জীবন বাঁচাতে সহায়ক হতে পারে। বিশ্বজুড়ে এই পদ্ধতি বহুল প্রচলিত এবং প্রশিক্ষিত ব্যক্তিদের মাধ্যমে এটি কার্যকরভাবে প্রয়োগ করা হয়।
সিপিআর কখন দিতে হবে? বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ বিভিন্ন চিকিৎসা সংস্থা যেমন ব্রিটিশ হার্ট ফাউন্ডেশন, আমেরিকান রেড ক্রস ইত্যাদি পরামর্শ দেয় যে, যদি কোনো ব্যক্তি হৃদরোগজনিত কারণে অজ্ঞান হয়ে পড়ে এবং শ্বাস নিতে না পারে, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে ৯৯৯ (বাংলাদেশের জরুরি নম্বর) অথবা অন্যান্য স্থানীয় জরুরি নম্বরে ফোন করা উচিত এবং সিপিআর দেওয়া শুরু করা উচিত।
![]() |
ছবিঃ সংগৃহিত। |
সিপিআর দেওয়ার সঠিক নিয়ম: রেড ক্রস এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, সিপিআরের সাতটি ধাপ রয়েছে:
নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন: আক্রান্ত ব্যক্তির চারপাশে কোনো বিপদ রয়েছে কিনা তা পরীক্ষা করুন। আগুন, পানি বা অন্য কোনো বিপজ্জনক অবস্থা থাকলে, নিরাপদ পরিবেশে নিয়ে আসুন।
সাড়া আছে কিনা পরীক্ষা করুন: আক্রান্ত ব্যক্তিকে শক্তভাবে নাড়িয়ে ডাকুন। যদি সে কোনো সাড়া না দেয়, তাহলে তার শ্বাস-প্রশ্বাস এবং পালস পরীক্ষা করুন।
সাহায্যের জন্য ডাকুন: যদি ব্যক্তিটি নিঃশ্বাস না নেয় এবং তার পালস না পাওয়া যায়, তাহলে দ্রুত জরুরি নম্বরে (যেমন ৯৯৯) কল করুন এবং আশেপাশের লোকজনকে সাহায্য করতে বলুন।
বুকে চাপ প্রয়োগের প্রস্তুতি নিন: আক্রান্ত ব্যক্তিকে সমতল জায়গায় চিৎ করে শুইয়ে দিন। হাঁটু গেড়ে তার পাশে বসুন।
বুকে চাপ দেওয়া শুরু করুন:
দুই হাত একত্রে রেখে বুকের মাঝখানে রাখুন।
প্রতিবার অন্তত ২ ইঞ্চি গভীরে চাপ দিন।
প্রতি মিনিটে ১০০-১২০ বার চাপ দিন।
৩০ বার চাপ দেওয়ার পর মুখে শ্বাস দেওয়ার প্রস্তুতি নিন।
মুখে শ্বাস দেওয়া:
আক্রান্ত ব্যক্তির মাথা পিছনে হেলিয়ে দিন এবং থুতনি উঁচু করুন।
নাক চেপে ধরে নিজের মুখ দিয়ে আক্রান্ত ব্যক্তির মুখে শ্বাস দিন।
শ্বাস দেওয়ার সময় নিশ্চিত করুন যে বুক ফুলে উঠছে।
প্রতি শ্বাস ১ সেকেন্ড স্থায়ী হওয়া উচিত।
দুইবার শ্বাস দিন এবং আবার বুক চাপ দেওয়া শুরু করুন।
সিপিআর চালিয়ে যান:
অ্যাম্বুলেন্স আসা পর্যন্ত সিপিআর চালিয়ে যান।
যদি আক্রান্ত ব্যক্তি শ্বাস নেওয়া শুরু করে, তবে তাকে পাশে কাত করে শুইয়ে দিন।
শিশুদের ক্ষেত্রে সিপিআর: শিশুদের সিপিআরের সময় কিছু বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়।
এক বছরের নিচে শিশুদের জন্য দুই আঙুল ব্যবহার করে বুক চাপ দিন।
চাপের গভীরতা হবে ৪ সেন্টিমিটার।
পাঁচবার মুখে শ্বাস দেওয়ার পর বুক চাপ দেওয়া শুরু করুন।
প্রতি ৩০ বার চাপের পর দুবার শ্বাস দিন।
সঠিকভাবে সিপিআর নিশ্চিত করতে শিশুর বুকের ওঠানামা খেয়াল করুন।
বাংলাদেশে সিপিআর সচেতনতা ও প্রশিক্ষণ: অনেক দেশে সাধারণ মানুষকেও ছোটবেলা থেকে সিপিআর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। তবে বাংলাদেশে এ বিষয়ে সচেতনতার অভাব রয়েছে। চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সাধারণ মানুষকে এই জীবন রক্ষাকারী প্রক্রিয়া সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেওয়া হলে জরুরি পরিস্থিতিতে প্রাণ বাঁচানো সম্ভব হবে।
হৃদরোগে আক্রান্ত ব্যক্তির জীবন বাঁচাতে সিপিআর একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং কার্যকর পদ্ধতি। এটি জানা থাকলে এবং প্রয়োগ করা গেলে অনেক প্রাণ বাঁচানো সম্ভব। তাই সিপিআর প্রশিক্ষণ নেওয়া এবং অন্যদের সচেতন করা আমাদের সকলের দায়িত্ব।