ফিলিস্তিন-ইসরায়েল যুদ্ধ: সংঘাত আরও তীব্র, আন্তর্জাতিক উদ্বেগ বাড়ছে
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের টানা হামলায় নিহতের সংখ্যা কয়েক হাজার ছাড়িয়েছে। যুদ্ধের কারণে পুরো অঞ্চল এক ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। হাসপাতালগুলো কার্যত অচল হয়ে পড়েছে, ত্রাণ ও চিকিৎসা সেবা পৌঁছানো কঠিন হয়ে গেছে। আন্তর্জাতিক মহল যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানালেও পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করেছে।
গাজার সর্বশেষ পরিস্থিতি: হতাহতের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে
ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলি হামলায় এ পর্যন্ত কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যা বেশি। আহত হয়েছেন কয়েক হাজার মানুষ, যাদের অনেকেরই চিকিৎসার সুযোগ নেই।
জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা সংস্থা (OCHA) জানিয়েছে, গাজায় খাদ্য, পানি, বিদ্যুৎ ও চিকিৎসা সামগ্রীর তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে হাজার হাজার ভবন ধ্বংস হয়েছে, যার ফলে লাখো মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছে।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (IDF) জানিয়েছে, তারা হামাসের বিভিন্ন স্থাপনা লক্ষ্য করে বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে হামাসের ছোড়া রকেটেও ইসরায়েলের বিভিন্ন শহরে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।
যুদ্ধের কারণ ও সংঘাতের পটভূমি
ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের সংঘাতের মূল কারণ ভূমি দখল ও রাজনৈতিক বিরোধ। ১৯৪৮ সালে ইসরায়েলের স্বাধীনতা ঘোষণার পর থেকেই এই অঞ্চলে অস্থিরতা বিরাজ করছে। বিশেষ করে গাজা, পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে লড়াই তীব্র আকার ধারণ করেছে।
যুদ্ধের প্রধান কারণসমূহ:
-
গাজার ওপর অবরোধ: ২০০৭ সাল থেকে গাজা কার্যত ইসরায়েলের অবরোধের মধ্যে রয়েছে, যার ফলে সেখানকার বাসিন্দারা বহু মৌলিক নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত।
-
আল-আকসা মসজিদ ইস্যু: ইসরায়েলি পুলিশ বারবার আল-আকসায় অভিযান চালানোয় মুসলিম বিশ্ব ক্ষুব্ধ হয়েছে এবং এতে সংঘাত আরও বাড়ছে।
-
হামাস ও ইসরায়েলের সংঘর্ষ: হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে সামরিক উত্তেজনা বিরাজ করছে, যা প্রায়ই বড় ধরনের সংঘাতে রূপ নেয়।
-
আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক সমর্থন: যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা বিশ্ব ইসরায়েলকে সমর্থন দিয়ে আসছে, অন্যদিকে ফিলিস্তিনকে সমর্থন জানাচ্ছে বেশ কয়েকটি আরব ও মুসলিম দেশ।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া: নিন্দা ও কূটনৈতিক প্রচেষ্টা
যুদ্ধ বন্ধ করতে আন্তর্জাতিক মহল চেষ্টা চালালেও এখনো কার্যকর কোনো সমাধান আসেনি।
প্রধান আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়াসমূহ:
-
জাতিসংঘ: জাতিসংঘ গাজায় মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা প্রকাশ করে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে।
-
যুক্তরাষ্ট্র: যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে সমর্থন দিলেও মানবিক সহায়তা দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
-
আরব দেশগুলো: সৌদি আরব, তুরস্ক, ইরানসহ বিভিন্ন দেশ ইসরায়েলের হামলার নিন্দা জানিয়েছে এবং ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি প্রকাশ করেছে।
-
ইউরোপীয় ইউনিয়ন: কিছু দেশ ইসরায়েলের পক্ষে অবস্থান নিলেও, বেশ কয়েকটি দেশ যুদ্ধবিরতির পক্ষে কথা বলছে।
গাজায় মানবিক সংকট: ভয়াবহ পরিস্থিতি
ইসরায়েলের লাগাতার বিমান হামলায় গাজার গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ধ্বংস হয়ে গেছে। হাসপাতালগুলোর সেবাদান ব্যাহত হচ্ছে, চিকিৎসা সরঞ্জামের সংকট দেখা দিয়েছে।
গাজায় চলমান সংকট:
-
খাদ্য ও পানির সংকট: অবরোধের ফলে খাদ্য সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে।
-
চিকিৎসা সেবার অভাব: হাসপাতালগুলোর চিকিৎসা সরঞ্জাম ফুরিয়ে গেছে, আহতদের সেবা দেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে।
-
গৃহহীন মানুষের সংখ্যা: হাজার হাজার ভবন ধ্বংস হওয়ায় বহু মানুষ খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নিয়েছে।
-
বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট বিচ্ছিন্ন: ইসরায়েল গাজার বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে দিয়েছে, যার ফলে যোগাযোগ ব্যবস্থাও ভেঙে পড়েছে।
সম্ভাব্য সমাধান ও ভবিষ্যৎ পরিপ্রেক্ষিত
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই যুদ্ধের স্থায়ী সমাধান এখনো অনিশ্চিত। তবে কিছু সম্ভাব্য সমাধান হতে পারে—
-
দুই-রাষ্ট্র নীতি: ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলকে আলাদা স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা।
-
আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক আলোচনা: জাতিসংঘের উদ্যোগে শান্তি আলোচনা পরিচালনা করা।
-
মানবিক সহায়তা বৃদ্ধি: যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকায় জরুরি ভিত্তিতে মানবিক সহায়তা পৌঁছানো।
-
অবরোধ প্রত্যাহার: গাজায় খাদ্য, পানি ও চিকিৎসা সরবরাহের জন্য অবরোধ তুলে নেওয়া।
ফিলিস্তিন-ইসরায়েল যুদ্ধ শুধু মধ্যপ্রাচ্যের সংকট নয়, এটি বৈশ্বিক রাজনীতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। এই সংঘাত যতদিন চলবে, ততদিন সাধারণ মানুষ ভোগান্তির শিকার হবে। আন্তর্জাতিক মহলের দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে এই মানবিক বিপর্যয় আরও তীব্র হতে পারে।