ঈদ জামাতে ৬ লক্ষাধিক মুসল্লির অংশগ্রহণ শোলাকিয়ায়

 

Sholakia Eid congregation

কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ময়দানে ৩১ মার্চ (সোমবার) সকাল ১০টায় শান্তিপূর্ণভাবে ১৯৮তম ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। এটি এশিয়া মহাদেশের সবচেয়ে বড় ঈদগাহ হিসেবে পরিচিত।

এবারের ঈদ জামাতে ইমামতি করেন মুফতি আবুল খায়ের মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ। নামাজ শুরুর এক ঘণ্টা আগেই শোলাকিয়া ময়দান কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। সকাল ১০টায় জামাত শুরু হলে আশপাশের সড়ক, অলিগলি এবং আবাসিক এলাকাগুলো জনসমুদ্রে পরিণত হয়। ৬ লক্ষাধিক মুসল্লির অংশগ্রহণে এবারের ঈদ জামাত দেশের সবচেয়ে বড় ও ঐতিহাসিক ঈদ জামাতে পরিণত হয়, বলে জানান পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী

মোনাজাতে শান্তি ও সমৃদ্ধির প্রার্থনা

ঈদের নামাজ শেষে অনুষ্ঠিত হয় বিশেষ মোনাজাত। দেশের শান্তি, সমৃদ্ধি এবং দেশের মানুষের সুস্থতা কামনা করে দোয়া করা হয়। এ ছাড়া ইসরায়েলের আগ্রাসন থেকে ফিলিস্তিনি মুসলমানদের হেফাজত কামনাসহ মুসলিম উম্মাহর শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করা হয়।

শোলাকিয়ায় চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা

শোলাকিয়ার ঈদ জামাতকে কেন্দ্র করে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।

✅ ৬৪টি সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ
✅ ৬টি ওয়াচ টাওয়ার থেকে মাঠের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ।
পুলিশ, র‍্যাব, বিজিবি, সেনাবাহিনী ও আনসার বাহিনী মোতায়েন।
১,১০০ পুলিশ সদস্য, ৫ প্লাটুন বিজিবি ও র‌্যাব সদস্য মোতায়েন।
ঢাকা থেকে বোম ডিসপোজাল ইউনিট প্রেরণ করা হয়। 
সাদা পোশাকে গোয়েন্দা সংস্থার নজরদারি
ফায়ার ব্রিগেড, অ্যাম্বুলেন্স ও মেডিক্যাল টিম প্রস্তুত রাখা হয়।

২০১৬ সালের জঙ্গি হামলার পর থেকে শোলাকিয়ার নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও উন্নত ও কঠোর করা হয়েছে। মুসল্লিদের মাঠে প্রবেশের আগে চার থেকে ছয়টি চেকপোস্ট পেরিয়ে আসতে হয়েছে।

শোলাকিয়া স্পেশাল ট্রেন সার্ভিস

দূর-দূরান্তের মুসল্লিদের যাতায়াতের সুবিধার্থে বাংলাদেশ রেলওয়ে ‘শোলাকিয়া স্পেশাল’ নামে দুটি বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করে।

🚆 ভৈরব-কিশোরগঞ্জ (স্পেশাল) ট্রেন: ভৈরব স্টেশন থেকে ভোর ৬টায় ছেড়ে আসে।
🚆 ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ (স্পেশাল) ট্রেন: সকাল ৬টায় ময়মনসিংহ থেকে ছেড়ে আসে।
🚆 নামাজ শেষে দুপুর ১২টায় ট্রেনগুলো কিশোরগঞ্জ থেকে ফেরত যায়।

নিরাপত্তার স্বার্থে ঈদের জামাতে মুসল্লিদের কেবল জায়নামাজ ও মোবাইল নিয়ে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়।

ঐতিহ্য অনুসারে জামাতের সূচনা

ঐতিহ্য অনুযায়ী, জামাত শুরুর ১৫ মিনিট আগে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী শটগানের তিনটি গুলি ছোঁড়েন। এরপর জামাত শুরুর ১০ মিনিট আগে আরও দুটি এবং পাঁচ মিনিট আগে আরও একটি গুলি ছোড়া হয়।

শোলাকিয়া ঈদগাহর ঐতিহাসিক পটভূমি

📜 ১৭৫০ সালে শোলাকিয়া ঈদগাহ প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৮২৮ সালে প্রথম সোয়া লাখ মুসল্লির অংশগ্রহণে বৃহত্তম ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়। 📜 সেই হিসেব অনুযায়ী, এবারের ঈদুল আজহার জামাত ছিল ১৯৮তম জামাত। 📜 শোলাকিয়া ঈদগাহ আজও তার ঐতিহ্য ও আড়ম্বর বজায় রেখে এশিয়ার সবচেয়ে বড় ঈদ জামাতের মর্যাদা ধরে রেখেছে।

শোলাকিয়ার ঈদ জামাত বাংলাদেশের ধর্মীয়, ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতীক। প্রতি বছরই লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসল্লির অংশগ্রহণে এই ঈদগাহ ময়দান ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার নামাজের মাধ্যমে এক মহিমান্বিত ধর্মীয় মিলনমেলায় পরিণত হয়।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url